আসসালামু আলাইকুম! আশাকরি সবাই অনেক অনেক ভালো আছেন। সম্মানিত পাঠকবৃন্দ সবাইকে আমাদের ট্রিক্সকাকা ওয়েবসাইটে স্বাগতম। আমাদের আজকের এই পোস্টে জন্মনিবন্ধন সম্পর্কে কিছু তথ্য শেয়ার করবো। আশাকরি পোস্টটি শেষ অব্দি পড়বেন।
আমাদের আজকের পোস্টটি পড়লে আশাকরি অনলাইনে নতুন জন্ম নিবন্ধন আবেদন করার নিয়ম সম্পর্কে সমস্ত কিছু জেনে যাবেন।
👉👉অনলাইনে ই - পাসপোর্ট আবেদন করার নিয়ম
বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির যুগে ঘরে বসে অনায়াসে করা যাচ্ছে নতুন জন্মনিন্ধন। পূর্ববর্তী সময়ে যখন জন্মনিবন্ধন করার জন্য পড়তে হতো নানা রকম সমস্যায়। হতে হতো বিড়ম্বণার শিকার। ঘুরতে হতো দিনের পর দিন। এই সমস্ত কিছুর অবশান ঘটিয়ে বর্তমানে অনলাইনে করা যাচ্ছে নতুন জন্মনিবন্ধন।
আপনার বাচ্চা হয়তো দিন দিন বড় হয়ে যাচ্ছে। বেশি দেরি না করে আজই অনলাইনে ঘরে বসে করে ফেলুন আপনার বাচ্চার জন্মসনদ। তো এটি করোর জন্য অবশ্যই আপনাকে জন্মনিবন্ধন এর ওয়েবসাইটে আবেদন দাখিল করতে হবে। তাহলে চলুন জেনে নেই কিভাবে ঘরে বসে অনলাইনে জন্মনিবন্ধনের জন্য আবেদন করবো।
জন্মনিবন্ধন কি
জন্ম নিবন্ধন একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র। একটি শিশুর প্রাথমিক পরিচয় পত্র এবং দেশের নাগরিকত্বের প্রমাণ হচ্ছে জন্ম নিবন্ধন। বর্তমানে সরকার জন্ম নিবন্ধন করা বাধ্যতামূলক করেছেন।
বর্তমানে প্রায় প্রত্যেকটি কাজে এখন জন্ম নিবন্ধন প্রয়োজন হচ্ছে। এমনকি সরকারি বেসরকারি প্রত্যেকটি কাজে এই জন্ম নিবন্ধন অতি প্রয়োজন। বাচ্চার স্কুলে ভর্তি থেকে শুরু করে উপবৃত্তি প্রাপ্তি ্র অন্যান্য কাজে জন্ম নিবন্ধন প্রয়োজনীয় ভূমিকা পালন করে থাকে।
তাই প্রত্যেকটি শিশুরই জন্মনিবন্ধন করে নেওয়া অত্যান্ত জরুরী। নিম্নে আমরা জন্মনিবন্ধনের আবেদন করার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি।
নতুন জন্ম নিবন্ধনের জন্য আবেদন
জন্মনিবন্ধন হলো একটি শিশুর প্রাথমিক পরিচয়পত্র। সরকারি জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন ২০০৪ এর তথ্য অনুযায়ী শিশুর জন্ম-গ্রহণের ৪৫ দিনের মধ্যে জন্ম নিবন্ধন করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
তবে ৪৫ দিনের মধ্যে যদি জন্ম নিবন্ধন করতে ব্যর্থ হন তাহলে অবশ্যই ৫ বছর হওয়ার পূর্বেই জন্ম নিবন্ধন করে নিতে হবে। ৫ বছর পর যদি আপনি জন্ম নিবন্ধন করতে চান তাহলে আপনাকে নানা রকম সমস্যায় পড়তে হতে পারে। বিশেষ করে অতিরিক্ত কাগজপত্র জমা দিতে হয়ে, আবার কিছু পরিমান টাকাও জরিমানা দিতে হতে পারে।
জন্ম নিবন্ধন করার জন্য আপনি নিজে ঘরে বসে অনলাইনে অথবা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র রেডি করে সরাসরি ইউনিয়ন পরিষদ/পৌরসভায় গিয়ে কাগজপত্র জমা দিয়ে জন্ম নিবন্ধন করে নিতে পারবেন।
অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন আবেদন করার নিয়ম ২০২৪
জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন এর অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে আপনি জন্মনিবন্ধনের জন্য আবেদন করতে পারবেন। এর জন্য আপনাকে কয়েকটি ধাপ অনুসরণ করতে হবে। তবেই আপনি আবেদন করতে সফল হবেন। নিম্নে ধাপ গুলো আলোচনা করা হলোঃ-
১ম ধাপ: প্রথমে এই লিংকে প্রবেশ করুন। https://bdris.gov.bd/br/application অথবা ক্লিক করুন।
২য় ধাপ: নিবন্ধনাধীন ব্যক্তির পরিচিতি
উপরে দেওয়া লিংকে ক্লিক করলে ঠিক নিচে ছবির মতো একটা পেজ ওপেন হবে। এটি হলো আবেদন পত্রের প্রথম পেজ।
এবার এখান থেকে আপনি কোন ঠিকানার ভিত্তিতে জন্ম নিবন্ধন করতে চান তা সিলেক্ট করুন। তারপর পরবর্তী- বাটনে ক্লিক করুন।
৩য় ধাপ: এবার নিবন্ধনাধীন ব্যক্তির পরিচিতির একটি ফরম নতুন ফরম দেখতে পাবেন। নিচের ছবিটি ফলো করুন।
এই ধাপে এসে আপনি আপনার বিস্তারিত তথ্য দিন। এমন ভাবে দিবেন যেন কোনো ধরনের ভূল না হয়।
এখানে,
১. নিবন্ধনকারীর নামের প্রথম অংশ ও শেষ অংশ বাংলায় ও ইংরেজিতে নির্ভূলভাবে লিখুন।
২. নিবন্ধনকারীর জন্মতারিখ দিন।
৩. পিতা-মাতার কততম সন্তান সেটি নির্বাচন করুন।
৪. লিঙ্গ (পুরুষ/মহিলা) নির্বাচন করুন।
৪র্থ ধাপ: নিবন্ধনকারীর জন্মস্থানের ঠিকানা
এই ধাপে নিবন্ধনকারীর জন্ম স্থানের বিবরণ দিতে হবে। একে একে প্রত্যেকটি তথ্য নির্ভূলভাবে দিতে হবে।
১. দেশ নির্বাচন করুন।
২. বিভাগ,জেলা,উপজেলা.সিটি কর্পোরেশন,ক্যান্টনমেন্ট নির্বাচন করুন।
৩. পৌরসভা/ইউনিয়ন,ওয়ার্ড নির্বাচন করুন।
৪. ডাকঘর (বাংলায় ও ইংরেজিতে) নির্বাচন করুন।
৫. গ্রাম/পাড়া/মহল্লা (বাংলায় ও ইংরেজিতে) নির্বাচন করুন।
৬. বাসা ও সড়ক (নাম,নম্বর) নির্বাচন করুন (বাংলায় ও ইংরেজিতে)।
ক্রমান্বয়ে সম্পূর্ণ তথ্য পূরণ করার পর পরবর্তীতে বাটনে ক্লিক করুন।
৫ম ধাপ: পিতা ও মাতার তথ্য
এই ধাপে নিবন্ধনকারীর পিতা ও মাতার তথ্য নির্ভূলভাবে দিতে হবে। নিচের ছবিটি লক্ষ করুন।
পিতার তথ্য-
১. পিতার জন্ম নিবন্ধনের ১৭ ডিজিট নম্বর।
২. জন্মতারিখ লিখুন।
৩. পিতার সম্পূর্ণ নাম বাংলায় ও ইংরেজিতে লিখুন।
৪. পিতার জাতীয় পরিচয় পত্র নম্বর দিন।
৫. পিতার জাতীয়তা নির্বাচন করুন।
মাতার তথ্য-
পিতার তথ্যের মতো একইভাবে মাতার তথ্য পুরণ করুন।
১. মাতার জন্ম নিবন্ধনের ১৭ ডিজিট নম্বর।
২. জন্মতারিখ লিখুন।
৩. মাতার সম্পূর্ণ নাম বাংলায় ও ইংরেজিতে লিখুন।
৪. মাতার জাতীয় পরিচয় পত্র নম্বর দিন।
৫. মাতার জাতীয়তা নির্বাচন করুন।
বিঃদ্রঃ পিতা ও মাতার জন্মনিবন্ধন নম্বর অবশ্যই অনলাইনে থাকতে হবে।
৬ষ্ঠ ধাপ: বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা
এই ধাপে আপনার নিবন্ধিত কোন ঠিকানা স্থায়ী ঠিকানা ও বর্তমান ঠিকানা হিসেবে ব্যবহার করবেন কিনা তা জানতে চাওয়া হবে। এখান থেকে কোনোটিই নয় লেখা চেকবক্সে ক্লিক করুন। উপরের ছবিটি লক্ষ করুন।
এবার আপনার সামনে বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানার একটি ফর্ম আসবে। আপনার বর্তমান অস্থায়ী ঠিকানা যদি জন্মস্থানের ঠিকানা থেকে আলাদা হয় তাহলে তা পূরণ করুন। উপরের ছবিটি লক্ষ করুন।
অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন আবেদন করার নিয়ম ২০২৪
জন্মস্থানের ঠিকানা, স্থায়ী ঠিকানা ও বর্তমান ঠিকানা একই হলে চেকবক্সে ক্লিক করুন। অটোমেটিক তথ্যপূরণ হয়ে গেলে পরবর্তী- তে ক্লিক করুন।
৭ম ধাপ: আবেদনকারী প্রত্যয়ন
এই ধাপে আপনি যদি নিজের জন্ম নিবন্ধনের জন্য আবেদন করে থাকেন তাহলে নিজ সিলেক্ট করুন।
এছাড়া অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন আবেদন করার নিয়ম অনুসারে অন্য কোন অভিভাবক বা পিতামাতা সন্তানের জন্য আবেদন করে থাকলে আবেদনকারী সিলেক্ট করুন। এবার নিচে আবেদনকারীর তথ্য পূরণ করুন।
৮ম ধাপ: ডকুমেন্টস সংযোজন
এই ধাপে জন্মনিবন্ধনের এর জন্য পূর্বে থেকে সংগ্রহ করে রাখা ডকুমেন্টস সংযোজন করুন। সংযোজন লেখাতে ক্লিক করে কম্পিউটার বা মোবাইলের ফাইল থেকে ডকুমেন্টস সিলেক্ট করুন।
অবশ্যই ফাইল সাইজ ১০০KB এর নিচে হতে হবে। তারপর Start এ ক্লিক করে আপলোড করে পরবর্তী তে ক্লিক করুন।
৯ম ধাপ: রিভিউ এন্ড আপলোড
সম্পূর্ণ তথ্য পূরণ করার পর আপনার সামনে সেই তথ্যগুলো একসাথে ফর্ম আকারে প্রদর্শন করা হবে। তথ্যগুলো সঠিক না তা যাচাই করে নিন কোনো ধরনের ভূল পরিলক্ষিত হলে পুনরায় ঠিক করে নিন। তারপর সাবমিট বাটনে ক্লিক করলে আপনার আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করুন।
১০ম ধাপ : ওটিপি ভেরিফিকেশন ও আবেদন সাবমিট
এই ধাপে আপনার মোবাইলে ৬ সংখ্যার অটিপি কোড পাঠানো হবে। সেটি দিয়ে ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করুন।
১১ তম ধাপ: নতুন জন্ম নিবন্ধনের আবেদন পত্র প্রিন্ট
এই ধাপে আপনার আবেদনকৃত ফর্মটি আবেদন আইডি সহ প্রিন্ট করে নিন। আবেদন আইডিটি সংরক্ষণ করুন। ভবিৎষতে প্রয়োজন হতে পারে। আপনি যদি মোবাইল দিয়ে আবেদন করে থাকেন তাহলে প্রিন্ট লেখাতে ক্লিক করে পিডিএফ অথবা একটি স্ক্রীনশট নিয়ে রাখুন।
১২ তম থাপ: জন্ম নিবন্ধন ই-পেমেন্ট
বর্তমানে জন্ম নিবন্ধনের ফ্রী সংক্রান্ত বহু আর্থিক জালিয়াতি হচ্ছে বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদ/ সিটি কর্পোরেশন কাউন্সিলর/ পৌরসভা কার্যালয়ে। জন্ম নিবন্ধনের নির্ধারিত ফি ৫০ টাকা হলেও, বিভিন্ন জনপ্রশাসন কার্যালয়ে তা ২০০-৩০০ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয়। তাই সরকারিভাবে এই প্রতারণা দূর করতে জন্ম নিবন্ধনের ই-পেমেন্ট কার্যক্রম চালু করা হয়েছে।
এই ধাপে আপনি আপনার পছন্দ অনুযায়ী, পেমেন্টের মাধ্যম হিসেবে বিকাশ/ নগদ/ উপায়/ ব্যাংক একাউন্ট/ কার্ড ইত্যাদি অপশন পাবেন। নির্দিষ্ট অপশন সিলেক্ট করে পেমেন্ট গেটওয়ের নির্ধারিত সিস্টেম অনুসরণ করে জন্ম নিবন্ধন ফি পরিশোধ করুন। E-payment সম্পন্ন করার পর একটি চালান ফরম পাবেন। এটি ডাউনলোড বা প্রিন্ট করে পরবর্তীতে নিবন্ধকের কার্যালয়ে জমা দিয়ে জন্ম নিবন্ধন সনদ সংগ্রহ করতে পারবেন।
আশাকরি আমাদের আজকের পোস্টের মাধ্যমে আপনি অনলাইনে নতুন জন্ম নিবন্ধন আবেদন করার নিয়ম সে সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে গেছেন। অনলাইনে নতুন জন্ম নিবন্ধন আবেদন করার নিয়ম সম্পর্কিত কোনো কিছু বুঝতে বা জানতে যদি কোনো ধরনের সমস্যা হয় তাহলে আমাদের সাপোর্ট টিমের সাথে যোগাযোগ করুন। আশাকরি দ্রুত তম সময়ের মধ্যে সমাধান করা হবে।
শেষ কথা
সম্মানিত পাঠ্যবৃন্দ আশা করি অনলাইনে নতুন জন্ম নিবন্ধন আবেদন করার নিয়ম সেই সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। আজকের লেখাটি এখানে সমাপ্ত ঘোষণা করছি। সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন। আল্লাহ হাফেজ।
ট্যাগ: অনলাইন জন্ম নিবন্ধন যাচাই,জন্ম নিবন্ধন আবেদন অবস্থা,জন্ম নিবন্ধন আবেদন পত্র প্রিন্ট,অনলাইন জন্ম নিবন্ধন আবেদন,জন্ম নিবন্ধন অনলাইন করার নিয়ম,জন্ম নিবন্ধন আবেদন পত্র প্রিন্ট pdf,BDRIS gov BD,জন্ম নিবন্ধন সংশোধন