আসসালামু আলাইকুম! আশাকরি সবাই অনেক অনেক ভালো আছেন। সম্মানিত পাঠকবৃন্দ সবাইকে আমাদের ট্রিক্সকাকা ওয়েবসাইটে স্বাগতম। আমাদের আজকের এই পোস্টে জাতীয় পরিচয়পত্র সম্পর্কে কিছু তথ্য শেয়ার করবো। আশাকরি পোস্টটি শেষ অব্দি পড়বেন।
আমাদের আজকের পোস্টটি পড়লে আশাকরি নতুন ভোটার আইডি বা জাতীয় পরিচয়পত্র করার নিয়ম সম্পর্কে সমস্ত কিছু জেনে যাবেন। আরো জেনে যাবেন নতুন ভোটার আইডি কার্ড করতে কি কি কাগজপত্র প্রয়োজন।
বিশ্বের সকল নাগরিকের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র বা ভোটার আইডি কার্ড করা বাধ্যতামূলক। এটি সাধারণ জনগনের বৈধ নাগরিকের ও দেশের পরিচয় বহন করে। বলা যায় এটি সকল নাগরিকের জন্য একটি বৈধ সার্টিফিকেট।
এই ভোটার আইডি কার্ডের মাধ্যমে একজন মানুষ কোন দেশের বৈধ নাগরিক সেটি শনাক্ত করা সম্ভব। তাছাড়াও ভোটার আইডি কার্ড প্রতিদিন বিভিন্ন কাজে প্রয়োজন হয়। উদাহরণসরুপ যদি বলি তাহলে, পাসপোর্ট তৈরিতে,মটর সাইকেল এর কাগজপত্র,ড্রাইভিং লাইসেন্স,সিম কার্ড রেজিষ্ট্রেশনে,বিভিন্ন চাকরির আবেদনে,বাচ্চাদের স্কুলে ভর্তিতে এছাড়াও বিভিন্ন কাজে প্রতিনিয়ত প্রয়োজন হয়।
আপনার বয়স যদি ১৮ বছর অথবা তার বেশি হয় তাহলে আপনি খুব সহজে অনলাইনে ভোটার আইডি কার্ডের জন্য আবেদন করতে পারবেন। আমাদের এই লেখাটি সম্পূর্ণ পড়লে আশাকরি অনলাইনে আবেদন সম্পর্কে সমস্ত কিছু জানতে পারবেন। এছাড়াও আরো জানতে পারবেন অনলাইনে নতুন ভোটার নিবন্ধন, নতুন ভোটার আইডি কার্ড করার নিয়ম ২০২৪, নতুন ভোটার নিবন্ধন, নতুন ভোটার আবেদন ফরম, ভোটার আইডি কার্ড পেতে কতদিন লাগে সম্পর্কে বিস্তারিত বিষয়।
নতুন ভোটার আইডি কার্ড করার নিয়ম
বর্তমানে ডিজিটাল বাংলাদেশে সমস্ত কাজ অনলাইনে ঘরে বসে করা যাচ্ছে। ভোটার আইডি কার্ডও এর ব্যতিক্রম নয়। এটিও আপনি অনলাইনে করতে পারবেন। আর এই প্রক্রিয়াটি একটি চলমান প্রক্রিয়া হিসেবে বিবেচিত। আপনি যদি বাংলাদেশের স্থায়ী বাসিন্দা হোন এবং আপনার বয়স যদি ১৮ বছর বা তার বেশি হয় তাহলে আপনি অনলাইনে ভোটার আইডি কার্ড করার জন্য বিবেচিত হবেন।
নতুন ভোটার আইডি কার্ড অনলাইনে আবেদন করার শেষে আপনি একটি পিডিএফ ফাইল পাবেন সেটি ডাউনলোড করে A4 পেপারে প্রিন্ট করে নিবেন। এর সাথে প্রয়োজনীয় কিছু ডকুমেন্ট সত্যায়্যিত করে ফর্ম এর সাথে সংযুক্ত করে উপজেলা নির্বাচন অফিস বরাবর দাখিল করতে হবে। এর কিছু দিন পর বায়োমেট্রিক / ফিংগার ও ছবি তোলার জন্য মেসেজ আসবে। তখন সেগুলো কম্প্লিট করে আসতে হবে। তার ১০-১৫ দিনের মধ্যে আপনি অনলাইনে আপনার ভোটার আইডি কার্ড পেয়ে যাবেন। সেটি প্রিন্ট করে লেমেন্যাটিং করে ব্যবহার করতে পারবেন। নতুন ভোটার আইডি কার্ড করার নিয়মবলি নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:-
👉👉ভোটার হওয়ার যোগ্যতা / ভোটার আইডি কার্ড এর আবেদন করার যোগ্যতা সমূহ
নতুন ভোটার আইডি কার্ড করার জন্য যা প্রয়োজন
নতুন জাতীয় পরিচয়পত্র করার ক্ষেত্রে প্রথমে অনলাইনে আবেদন সঠিক ভাবে পূরণ করতে হবে। ইতিপূর্বে আমরা বলছি যে, আবেদন শেষে একটি পিডিএফ পাওয়া যাবে। এই আবেদন সংঙ্গে কিছু প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট যুক্ত করে উপজেলা নির্বাচন অফিস বরাবর দাখিল করতে হবে। ভোটার আইডি কার্ড এর আবেদনের সংঙ্গে যে সকল কাগজপত্র নির্বাচন অফিসে জমা দিতে হবে তা নিচে উল্লেখ করলাম।
👉👉নতুন ভোটার নিবন্ধন করতে কি কি লাগে ২০২৪
অনলাইনে নতুন ভোটার আইডি কার্ড আবেদন পদ্ধতি
অনলাইনে নতুন জাতীয় পরিচয়পত্রের আবেদন করলে এটি নিজে নিজে অথবা যে কোনো কম্পিউটার দোকান থেকে করতে পারবেন। সুতরাং ভুল হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। তাই নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করে আপনি নিজেই অনলাইনে জাতীয় পরিচয়পত্রের আবেদন সম্পন্ন করে নিন।
নতুন ভোটার আইডি কার্ড করার নিয়ম (ধাপ-১)
নতুন ভোটার আইডি কার্ডের অনলাইন আবেদন করতে হলে প্রথমে আপনার যেকোন ডিভাইস (যেমন- মোবাইল, ল্যাপটপ অথবা কম্পিউটার থেকে services.nidw.gov.bd ওয়েবসাইটে যেতে হবে।
উপরের লিংকে ক্লিক করলে ঠিক উপরে দেখানো ইন্টারফেসটি আসবে। এখন এখান থেকে আবেদন করুন বাটনে ক্লিক করুন অথবা ইংরেজিতে Get Started লেখা থাকলে সেটিতে ক্লিক করুন।
তারপর উপরে দেখানো ছবির মেতা একটি পেইজ আপনার সামনে প্রদর্শিত হবে। এখানে আপনার সম্পূর্ণ নাম ইংরেজিতে এবং জন্ম তারিখ লেখতে হবে (নির্ভূল ভাবে)। তবে অবশ্যই সকল তথ্য আপনার জন্ম নিবন্ধন অথবা সার্টিফিকেট অনুসারে সঠিক ভাবে পূরণ করতে হবে। জন্মনিবন্ধনে যদি আগে থেকে ভূল থাকে তাহলে সেটি সার্টিফিকেট অনুসারে সংশোধন করে নিন। তারপর আবেদন করুন। এখানে ভুল তথ্য প্রদান করলে পরবর্তীতে সংশোধনের কোন সুযোগ নেই। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে বাংলায় ফরম হলে বহাল বাটনে অথবা ইংরেজিতে ফরম হলে Continue বাটনে ক্লিক করুন।
এবার উপরের ছবির মত একটি ছবি পেজ দেখতে পারবেন। এখানে আপনার একটি সচল মোবাইল নাম্বার দিন এবং তারপর Send SMS অথবা বার্তা পাঠান বাটনে ক্লিক করুন।
এই পেজে উপরের ছবির মতো একটি পেজ ওপেন হবে। এখান থেকে আপনার পছন্দমত একটি ইউজারনেম এবং পাসওয়ার্ড দিতে হবে। তবে ইউজারনেম দেওয়ার সময় এমন একটি ইউজারনেম দিবেন যেটি আগে কখনো ব্যবহার করা হয়নি। এক্ষেত্রে আপনি আপনার নাম ও শেষে কয়েকটি নম্বর ব্যবহার করে ইউজারনেম তৈরি করতে পারেন। এবার Continue বাটনে ক্লিক করে একাউন্ট ক্রেইট করে নিন। তবে অবশ্যই এই ইউজারনেম ও পাসওয়ার্ড মনে রাখবেন ভবিৎষতে একাউন্টে লগিন করার সময় বা যেকোনো কিছু ইডিট বা আইডি কার্ড ডাউনলোড করার সময় এই গুলো দরকার পড়বে।
নতুন ভোটার আইডি কার্ড করার নিয়ম (ধাপ-২)
তো পাঠকবৃন্দ এতক্ষণ আমরা একাউন্ট খোলা সম্পর্কে জানলাম। এবার আমরা আলোচনা করবো কিভাবে আপনি আপনি আপনার প্রোফাইলের তথ্যাদি ইডিট বা আইডি কার্ড ডাউনলোড করবেন।
এখান থেকে আমরা বিস্তারিত প্রোফাইল/প্রোফাইলে ক্লিক করবো। তারপর নিচের ছবির মতো ইন্টারফেস আসবে।
তারপর edit বাটনে ক্লিক করলে নিচের পেইজের মতো একটি পেইজ আপনার সামনে আসবে।
এখানে আমাদেরকে তিনটি ধরনের তথ্য প্রদান করতে হবে যেমন- ব্যক্তিগত তথ্য, অন্যান্য তথ্য, ঠিকানা। এ সকল তথ্য দেয়ার জন্য এডিট বাটনে ক্লিক করলে উপরে পেইজের মতো একটি পেইজ আপনার সামনে আসবে।
এখানে আপনার প্রথমতো ব্যক্তিগত তথ্য দিতে হবে। এবং সেগুলো সম্পুর্ণ সঠিক তথ্য দিতে হবে। কোনো ধরনের ভূল করা যাবেনা।
- আপনার নাম (বাংলায় ও ইংরেজিতে)
- আপনার জন্ম তারিখ
- পিতা-মাতার তথ্য
- ব্লাড গ্রুপ
- জন্ম স্থান
- জন্ম নিবন্ধন নম্বর
- লিঙ্গ
- স্বামী/স্ত্রীর তথ্য
এই সকল তথ্যাদি সঠিক ভাবে পূরণ করতে হবে। উল্লেখ্য আবশ্যক, কিছু কিছু ঘরে লাল স্টার তথ্য রয়েছে সেগুলো বাধ্যতামূলক পূরণ করতে হবে। ব্যক্তিগত তথ্যাদি পূরণ করার পর পরবর্তী/ Next বাটনে ক্লিক করতে হবে। তারপর নিচের ছবির মতো অন্যান্য তথ্য এর পেইজ আসবে।
এখানেও পর্যায়ক্রমে সকল তথ্য সঠিক ভাবে পুরণ করতে হবে। নিম্নরুপ:-
- আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা
- পেশা
- পাসপোর্ট নম্বর
- ধর্ম
- মোবাইল নম্বর
এরপর Next/ পরবর্তী বাটনে ক্লিক করে নিচের ছবির মত ঠিকানা/Address ফরমটি ওপেন করুন।
এখান থেকে স্থায়ী ঠিকানা এবং বর্তমান ঠিকানা সঠিক ভাবে পূরন করবেন। এই ফরমে আপনি উল্লেখ করে দিতে হবে বর্তমান ঠিকানায় নাকি স্থায়ী ঠিকানায় ভোটার হবেন। উপরের সকল তথ্যাদি সঠিকভাবে পূরণ করে Next বা পরবর্তী বাটনে ক্লিক করুন।
উল্লেখ্য এখানে অনলাইনে কোনো কাগজপত্র যুক্ত করার প্রয়োজন নেই। উপরের ছবির মতো একটি পেইজ আসবে। সাবমিট বাটনে ক্লিক করে নতুন ভোটার আইডি কার্ড এর আবেদন সম্পন্ন করুন।
নতুন ভোটার আইডি কার্ড করার নিয়ম (ধাপ-৩)
আশাকরি অনলাইনে নতুন ভোটার আইডি কার্ড করার নিয়ম সম্পর্কে ধাপে ধাপে সব শিখতে ও বুঝতে পেরেছেন। এখন আপনি আবেদস ফর্মটি ডাউনলোড দিয়ে A4 পেপার কাগজে প্রিন্ট করে নিন। তারপর প্রিন্টকৃত আবেদন ফরমে ৩৩নং কলামে আবেদনকারীর স্বাক্ষরের স্থানে আপনার স্বাক্ষর দিতে হবে। ৩৪ নং কলামে সনাক্তকারী হিসেবে পিতা বা মাতা অথবা একই এলাকার কারর এনআইডি নম্বর দিতে এবং ৩৫ নং কলামে সনাক্তকারীর স্বাক্ষর প্রদান করতে হবে। ৪০ নং কলামে যাচাই কারীর (ইউপি সদস্য) নাম, ৪১ নং কলামে যাচাইকারীর ভোটার আইডি নম্বর এবং ৪২ নং কলামে যাচাইকারীর স্বাক্ষর প্রদান করে আবেদন পত্র সম্পন্ন করতে হবে।
এরপর, উক্ত প্রিন্ট করা অনলাইন আবেদন ফরমের সাথে কিছু কাগজপত্রাদি সংযুক্ত করে নির্বাচন অফিসে জমা দিন।
👉👉নতুন ভোটার নিবন্ধন করতে কি কি লাগে ২০২৪
অত্র কার্যালয় সকল কাগজপত্রাদি যাচাই এবং বাছাই এর মাধ্যমে সকল তথ্য ঠিক থাকলে পরবর্তীতে কার্যক্রমের জন্য আপনার সাথে যোগাযোগ করবে।
বায়োমেট্রিক প্রদান (ধাপ-৪)
৩য় ধাপে উল্লেখিত সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে নির্বাচন অফিস থেকে আপনার সকল কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে বায়োমেট্রিক তথ্য প্রদানের জন্য যোগাযোগ করতে বলা হবে।
আপনার বায়োমেট্রিক তথ্য দেওয়ার পর উপজেলা নির্বাচন অফিস থেকে একটি রিসিটও দেয়া হবে। আপনি রিসিট ব্যবহার করে আপনার NID এর অনলাইন কপি বের করতে পারবেন।
শেষ কথা
সম্মানিত পাঠ্যবৃন্দ আশা করি নতুন ভোটার নিবন্ধন করতে কি কি লাগে,কিভাবে অনলাইনে আবেদন করা যায়, সেই সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। অনলাইনে নতুন ভোটার নিবন্ধন এর আবেদন করার পূর্বে অবশ্যই উক্ত কাগজপত্র সংগ্রহ এবং ফি সম্পর্কে জেনে নিবেন। আজকের লেখাটি এখানে সমাপ্ত ঘোষণা করছি। সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন। আল্লাহ হাফেজ।