আসসালামু আলাইকুম! আশাকরি সবাই অনেক অনেক ভালো আছেন। সম্মানিত পাঠকবৃন্দ সবাইকে আমাদের ট্রিক্সকাকা ওয়েবসাইটে স্বাগতম। আমাদের আজকের এই পোস্টে জাতীয় পরিচয়পত্র সম্পর্কে কিছু তথ্য শেয়ার করবো। আশাকরি পোস্টটি শেষ অব্দি পড়বেন।
বর্তমান সময়ে দেখা যাই ভোটার আইডি কার্ডে বিভিন্ন ধরনের ভূল পরিলক্ষিত হয়। এটা সাধারণ নির্বাচন অফিস কর্তৃক টাইপিং মিসটেক বা অন্যান্য ভূলের কারনে হয়ে থাকে। আর এই ভুল সংশোধন করতে হতে হয় নানা রকম বিড়ম্বনার শিকার।
আমাদের আজকের পোস্টের মাধ্যমে আমরা জানবো কিভাবে অনলাইনে খুব সহজে কিছু ডকুমেন্ট আপলোড করে আপনার ভোটার আইডি কার্ড বা জাতীয় পরিচয়পত্র কিভাবে সংশোধন করবেন। আর কি কি কাগজপত্র লাগবে? এই পোস্টে আমরা সমস্ত বিষয় আলোচনা করবো।
নতুন ভোটার হয়েছেন, ভোটার আইডি কার্ড ডাউনলোড করে দেখতে পেলেন আপনার নাম অথবা আপনার পিতা-মাতার নাম অথবা অন্যান্য তথ্য ভূল রয়েছে। ভূল হতেই পারে এটা নিয়ে টেনশন করার দরকার নেই। মাত্র কয়েকদিনের মধ্যেই আপনি নিজেই আপনার হাতে থাকা স্মার্ট ফোন ব্যবহার করে অনলাইনে ভূল সংশোধনের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
তাহলে চলুন জেনে নিই, অনলাইনে কিভাবে ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে হয় এবং কি কি কাগজপত্র প্রয়োজন হয়।
জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন কি কি কাগজপত্র প্রয়োজন হয়
ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে সাধারনত প্রয়োজন হয় নিম্নে দেওয়া ডকুমেন্টগুলোঃ
- শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ
- পাসপোর্ট
- ড্রাইভিং লাইসেন্স
- ডিজিটাল জন্ম নিবন্ধন কপি
- এমপিও শীট বা সার্ভিস বইয়ের কপি
- বিয়ের কাবিন নামা
- পিতা-মাতার আইডি কার্ড
- সন্তানদের আইডি কার্ড
বিঃদ্রঃ এগুলোর যে কোন ২টি ডকুমেন্ট দিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করা যায়।
আরো বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
NID Card সংশোধন করতে কি কি লাগে তার বিস্তারিত জানতে জানুন- তাছাড়া, নির্বাচন কমিশন কর্তৃপক্ষ এনআইডি সংশোধন প্রক্রিয়া আরও সহজ করার জন্য একটি Standard Operation Procedures (SOP) খসড়া চূড়ান্ত করেছে।
ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে কত টাকা লাগে
জাতীয় পরিচয়পত্র বা ভোটার আইডি কার্ডের তথ্য সংশোধন করতে সাধারনত ২৩০ টাকা লাগে। এছাড়া ভোটার আইডি কার্ডের অন্যান্য তথ্য সংশোধনের জন্য ১১৫ টাকা অতিরিক্ত ফি প্রদান করতে হয় এবং উভয় ধরণের তথ্য সংশোধনের ক্ষেত্রে ৩৪৫ টাকা ফি প্রদান করতে হয়। আর এই ফি বিকাশ, রকেটের বা অন্যান্য মোবাইল ব্যাংকিং বা অনলাইন ব্যাংকিং এর মাধ্যমে জাতীয় পরিচয় পত্র ফি পরিশোধ করা যায়।
তাহলে দেরি কেন? চলুন জেনে নিই কিভাবে অনলাইনে জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধনের আবেদন করবেন।
ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন আবেদন করার নিয়ম
ভোটার আইডি কার্ড সংশোধনের আবেদন করতে হলে প্রথমত আপনাকে জাতীয় পরিচয়পত্রের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে আপনাকে একাউন্ট ক্রেইট করে লগিন করতে হবে। নিম্নে লক্ষ করুনঃ-
- প্রথমে services.nidw.gov.bd ভিজিট করুন।
- রেজিস্টার করুন অপশনে ক্লিক করুন। (উপরের ছবিটি লক্ষ করুন)
- তারপর জাতীয় পরিচয়পত্রে নম্বর (১০ ডিজিট অথবা ১৭ ডিজিট),
- জন্মতারিখ দিন (দিন,মাস,সাল)
- ক্যাপচা পূরণ করুন।
- সাবমিট অপশনে ক্লিক করুন।
প্রয়োজনে নিচের ছবিটি লক্ষ করুন।👇
- এই ধাপে আপনার বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা দিন।
- একটি সচল মোবাইল নম্বর দিন।
- ৬ সংখ্যার অটিপি কোড প্রদান করুন।
- এবার ফেস ভেরিফিকেশন কম্প্লিট করুন। এক্ষেত্রে এখানে ব্যক্তি ও একটি অ্যাপ প্রয়োজন পড়বে। অ্যাপটির লিংক দিয়ে দেওয়া হলো এখান থেকে ক্লিক করে ডাউনলোড করে ফেস ভেরিফিকেশন করে নিন। ফেস ভেরিফিকেশন করার সময় চোখের পলক, ডানে , বামে ঘুরতে বলবে সব কম্প্লিট করে নিবেন।
এবার প্রোফাইল থেকে এডিট অপশনে ক্লিক করে আপনার ভূল তথ্য গুলো সংশোধন করুন। এরপর সংশোধন ফি ও প্রমাণপত্র অ্যাটাচ করে আবেদন জমা দিন। আবেদন অনুমোদিত হলে আপনাকে এসএমএস এর মাধ্যমে কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দিবে। তখন সেটিকে ডাউনলোড করে ব্যবহার করতে পারবেন।
ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করার প্রক্রিয়াটি নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো। প্রক্রিয়াটি ধাপে ধাপে অনুসরণ করে আপনি আপনার ভোটার আইডি কার্ড সংশোধনের আবেদন করতে পারবেন।
ধাপ ১ – প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের স্ক্যান/ ছবি তুলে নিন
জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন আবেদন করার পূর্বে প্রয়োজনীয় প্রমাণগুলো কম্পিউটার দোকান থেকে অথবা মোবাইল অ্যাপ ক্যামস্ক্যানারের সাহায্যে স্ক্যান করে নিতে হবে। লক্ষ রাখতে হবে স্ক্যান করা প্রমাণপত্রে সাইজ যেন ১এমবি এর উপরে না যায়। আর (JPG,PDF) ফাইল দেওয়ার চেষ্টা করবেন। স্ক্যান করতে না পারলে কোনো ট্যাবিলের উপর রেখে সুন্দর করে ছবি তুলে নিন।
ধাপ ২ – NID এর ওয়েবসাইট রেজিষ্ট্রেশন করুন
যদি জাতীয় পরিচয়পত্রের ওয়েবসাইটে পূর্বে থেকে রেজিস্ট্রেশন করা থাকে তাহলে NID নম্বর ও পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করুন। আর যদি পূর্বে থেকে রেজিস্ট্রেশন করা না থাকে তাহলে রেজিস্টার অপশন থেকে রেজিস্ট্রেশন করুন। রেজিষ্ট্রেশন করার নিয়মাবলি পূর্বে আলোচনা করা হয়েছে।
👉👉নতুন ভোটার হওয়ার অঙ্গীকারনামা
ধাপ ৩ – তথ্য সংশোধন করুন
জাতীয় পরিচয় পত্রের ওয়েবসাইটে লগইন করার পর প্রোফাইল অপশনে যেতে হবে। এখানে ৩ ধরণের তথ্য আপনি দেখতে পারবেন।
- ব্যক্তিগত তথ্য।
- অন্যান্য তথ্য।
- ঠিকানা।
ব্যক্তিগত তথ্য সংশোধন করার জন্য উপরের ডান পাশ থেকে এডিট বাটনে ক্লিক করবেন। নিচের ছবির মত তথ্যগুলো সংশোধন করার অপশন পাবেন। তখন এখান থেকে আপনার যে যে তথ্য ভূল আছে সেগুলো ঠিক করে নিন।
ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন
আপনি যে তথ্যটি সংশোধন করতে চান তার বাম পাশের টিক অপশনে ক্লিক করে ঠিক করে নিন। মনে রাখবেন আপনার ভুল তথ্যগুলো আপনার দেওয়া ডকুমেন্টের সাথে মিল রেখে সঠিকভাবে লিখবেন না হলে রিজেক্ট করে দিতে পারে। এরপর পরবর্তী অপশনে ক্লিক করুন।
এবার আপনার সামনে সংশোধন করা তথ্যের পূর্ববর্তী তথ্য ও সংশোধিত তথ্য দেখতে পারবেন। এবার সব কিছু আবার ভালোভাবে চেক করে নিবেন। কোনো ধরনের ভূল পরিলক্ষিত হলে ব্যাক গিয়ে আবার সমাধান করুন। সবকিছু ঠিক থাকলে পরবর্তী অপশনে ক্লিক করুন। পরবর্তী অপশনে ক্লিক করলে দেখতে পারবেন আপনি কত টাকা ফি কাটবে। সেই পরিমান টাকা আপনি ফি প্রদান করবেন। নিম্নে ফি প্রদান করার নিয়ম বিস্তারিত আলোচনা করা হলোঃ-
ধাপ ৪ – জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন ফি প্রদান করুন
এই ধাপে, আপনাকে আপনার ভুল তথ্যের ধরণ অনুযায়ী সংশোধন ফি প্রদান করতে হবে। একটা বিষয় মাথায় রাখবেন, এতক্ষনে আপনি যা করেছেন এই মূহুর্থে সেটি কোনোভাবেই ক্লোজ করবেন না। এতে আপনি সমস্যায় পড়তে পারেন। সংশোধান ফি প্রদান করে তার আপনার বাকি কাজটুকু করতে হবে।
বিকাশের মাধ্যমে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন ফি জমা দেওয়ার নিয়ম
আপনি চাই যেকোনো মোবাইল ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে জাতীয় পরিচয়পত্রে সংশোধন ফি জমা দিতে পারবেন। তবে আমি মনে করি বিকাশের মাধ্যমে ফি জমা দেওয়া একদম সহজ। তাই আমি বলবো চেষ্টা করবেন বিকাশের মাধ্যমে ফি প্রদান করার। বিকাশের মাধ্যমে ফি দিতে বিকাশ এ্যাপ থেকে আপনার বিকাশ একাউন্টে লগইন করুন এবং নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করুন।
- পে বিল অপশনে যান;
- সরকারি ফি অপশনে ক্লিক করুন।
- NID Service অপশনটি বাছাই করুন;
- আপনার NID নম্বরটি ইংরেজিতে লিখুন;
- আপনার আবেদনের ধরণ বাছাই করুন;
- আপনার বিকাশ একাউন্টের পিন নম্বর দিয়ে ফি পরিশোধ করুন।
ফি প্রদান করা সম্পূর্ণ হলে আপনি আবার জাতীয় পরিচয়পত্রে ওয়েবসাইটে ফিরে যান এবং পরবর্তী অপশনে ক্লিক করুন। এরপর কাগজপত্র আপলোড করুন।
ধাপ ৫ – ডকুমেন্ট আপলোড ও আবেদন সাবমিট
আমাদের লেখার শুরুতেই আমরা একটা বিষয় বলেছিলাম যে, প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট স্ক্যান করে রাখতে। আশাকরি স্ক্যান করে রেখেছেন। এই ধাপে স্ক্যান করা ডকুমেন্ট গুলো আপলোড করুন। তারপর সাবমিট অপশনে ক্লিক করুন। সর্বশেষ নিশ্চিত করুন বাটনে ক্লিক করে আবেদন সাবমিট করুন।
ধাপ ৬ – ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন ফরম ডাউনলোড
আবেদন সাবমিট করার পর আপনার ড্যাশবোর্ডে ফিরে আসুন। উপরের দিকে লক্ষ করলে দেখতে পারবেন ডাউনলোড করার একটি অপশন চলে এসেছে। সেখান থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন ফরমটি ডাউনলোড করে নিন। এবং যেকোনো কম্পিউটার দোকান হতে সেটি প্রিন্ট করে নিজের কাছে সংরক্ষন করুন।
নির্বাচন অফিস যদি বেশি দুরে হয় তাহলে সেটি জমা দেওয়ার দরকার নেই অনলাইনে কয়েক দিনের মধ্যে সংশোধন হয়ে যাবে। আর যদি অফিসটি কাছাকাছি হয় তাহলে ফরমটি জমা দেওয়ার চেষ্টা করুন। আশাকরি দ্রুত সমাধান হয়েছে যাবে।
জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন ফি
ভোটার আইডি কার্ডের তথ্য সংশোধন ফি ভ্যাট সহ ২৩০ টাকা এবং অন্যান্য তথ্য সংশোধন ফি ১১৫ টাকা। উভয় তথ্য সংশোধন ফি ভ্যাটসহ ৩৪৫ টাকা, রিইস্যু আবেদন ফি ৩৪৫ টাকা এবং জরুরী রিইস্যু ফি ৫৭৫ টাকা।
আপনার মোবাইল থেকেই অনলাইনে আবেদন করেই আপনার জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন করতে পেরেছেন।
👉👉নতুন ভোটার হওয়ার ১১ নং ফরম PDF ডাউনলোড
শেষ কথা
সম্মানিত পাঠ্যবৃন্দ আশা করি ভোটার আইডি কার্ড/জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করতে কি কি লাগে,কিভাবে অনলাইনে আবেদন করা যায়, সেই সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। আজকের লেখাটি এখানে সমাপ্ত ঘোষণা করছি। সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন। আল্লাহ হাফেজ।